টাঙ্গাইলের বাসাইলে গত এক সপ্তাহে ঝিনাই নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০-১৫টি ভিটাবাড়ি ও ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ফলে অনেকেই বাড়ি-ঘর ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। অনেকেই আবার শেষ সম্বল বসত ভিটে হারিয়ে হয়েছেন আশ্রয়হীন।
সোমবার (২৬ জুলাই) সকালে সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়। এছাড়াও প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের ভাঙন আতঙ্কে কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত। ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছে বিলপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া বীর নিবাসটিও। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবার দাবি ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ উপজেলার নদী তীরবর্তী ফুলকি, কাশিল, কাঞ্চনপুর ও হাবলা ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকার অন্তত ২০টি গ্রামে ইতোমধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন কবলিত গ্রাম গুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলকি ইউনিয়নের দোহার, হাকিমপুর, জশিহাটি ও একঢালা। কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর, দেউলী, কামুটিয়া, নর্থখোলা, কাশিল, থুপিয়া, নাকাছিম ও বিয়ালা। কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাজিরাপাড়া, বিলপাড়া, মানিকচর ও আদাজান।
এদিকে বিলপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া বীর নিবাস যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে পাকা সড়ক, খেলার মাঠ, হাট-বাজার, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। এখনই ব্যবস্থা না নিলে নদীগর্ভে বিলীন হবে বসতবাড়িসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সারা বছরই ঝিনাই নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার ও বেকু দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। প্রতি বছর এই নদী থেকে ব্যাপকহারে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। অবৈধ উত্তোলন বন্ধে দায়সারা দু’একটি অভিযান ছাড়া প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যময় বলে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া এলাকার খসরু খান আরটিভি নিউজকে জানান, ‘আমার ভিটাবাড়ি যেটুকু ছিল। সবই নদীতে চলে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করার মতো জায়গাটুকুও নেই।’
ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল আরটিভি নিউজকে বলেন, ঝিনাই নদী তীরবর্তী দোহার, হাকিমপুর, জশিহাটি পশ্চিমপাড়া ও একঢালা এলাকার প্রায় ১০টি ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক কৃষকের আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তবে দোহার পয়েন্টে ভাঙন কবলিত বাধ সংস্কারের কাজ চলছে।
বাসাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, গত বর্ষায় কামুটিয়া পয়েন্টে ভেঙ্গে যাওয়া ঝিনাই নদী-রক্ষা বেড়িবাঁধটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও চলতি সপ্তাহেই শুরু হয়েছে দোহার পয়েন্টে বাধ সংস্কারের কাজ।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, ঝিনাই নদীর ভাঙন রোধে বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ অব্যাহত আছে। নতুন করে ভাঙন কবলিত পয়েন্টগুলোতে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতি বছর অস্থায়ী ভাঙন রোধে শুধু টাকাই অপচয় হচ্ছে। নদীর এই ভাঙন রোধে স্থায়ী পরিকল্পনা নেয়া জরুরী। অহেতুক টাকা অপচয় ঠেকাতে ও নদী ভাঙন রোধের স্থায়ী প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।